চাঁদে মানুষ পাঠানোর মিশন পুনরায় শুরু হলো আর্টেমিস ১ এর মাধ্যমে

এপোলো যান এর হাত ধরে মানুষ চাঁদে পা রেখেছে তার ৫০বছর পার হলো গত ডিসেম্বরে। এবার আর্টেমিস প্রোগ্রাম এর মাধ্যমে আবার চাঁদের মাটিতে লম্বা সময় পর পা রাখতে যাচ্ছে মানুষ। ৩,৯৯১টন এর স্পেশ শাটল গতকাল পৃথিবী থেকে পাড়ি দিয়েছে চাঁদের উদ্দেশ্যে।

আর্টেমিস ১ এর অংশ এই মিশন চাঁদের আশেপাশে টেস্ট ফ্লাইট পারফর্ম করবে যা থেকে রকেট ও স্পেসক্রাফট এর পারফরমেন্স নির্ণয় করা হবে। স্পেক্স এক্সপ্লোরেশন এর নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা করবে এই মিশন, চলুন বিস্তারিত জেনে নেওয়া যাক এই স্পেস মিশন সম্পর্কে।

নাসা আর্টেমিস প্রোগ্রাম কি?

আর্টেমিস প্রোগ্রাম হলো নাসা পরিচালিত স্পেস মিশন সিরিজ। মোট তিনটি আর্টেমিস মিশন পরিচালিত হবে, যার মধ্যে আর্টেমিস ১ হবে ক্রুবিহীন যা কাল লঞ্চ করা হয়েছে। আর্টেমিস ২ হবে একটি ক্রুসহ ফ্লাইট যা স্পেসে মানুষকে সবচেয়ে দূরের পথ পাড়ি দিতে সাহায্য করবে। আর্টেমিস ৩ এর মিশন হবে চাঁদে প্রথম মহিলা ও অশ্বেতাঙ্গ সহ ল্যান্ড করা এবং চাঁদের মাঠিতে এক সপ্তাহব্যাপী বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা চালানো।

১৯৭২ সালে লঞ্চ করা এপোলো ১৭ মিশন এর পর এই প্রথম আর্টেমিস ৩ হবে যুক্তরাষ্ট্রের স্পেস এজেন্সির চাঁদে যাত্রার মিশন। আর্টেমিস যাত্রার মিশন হলো লুনার এক্সপ্লোরেশন, তবে নাসার চিন্তা কিন্তু বেশ সুদূরপ্রসারী। আর্টেমিস স্পেসফ্লাইট এর বদৌলতে প্রাপ্ত প্রযুক্তি ও গবেষনা ব্যবহার করে নাসা ভবিষ্যতে মঙ্গলের বুকে পা রাখতে চায়। নাসার এই পরিকল্পনা অনুসারে প্রথমে লুনার অরবিটে স্পেস স্টেশন তৈরি ও চাঁদকে মঙ্গল যাত্রার মিশনে সম্পৃক্ত করা হবে।

আর্টেমিস ছিলেন পৌরাণিক গ্রিক গল্পে চাঁদের দেবী ও এপোলো এর যমজ বোন। ৫০ বছর পূর্বে লঞ্চ করা চাঁদ যাত্রার মিশনের নামে এপোলো ছিলো, সুতরাং দুইটি মিশনের সম্পর্ক একদম চোখের সামনে দেখা যাচ্ছে।

অন্যদিকে মানুষ বহনকারী স্পেসক্রাফট এর নাম রাখা হয়েছে অরিয়ন। আবার এই অরিয়ন ছিলো পৌরাণিক কাহিনীতে আর্টেমিস এর শিকারের সাথী, এছাড়া আকাশে দেখা যাওয়া সবচেয়ে পরিচিত কনস্টেলেশনের নামও একই।

নাসা আবার কেনো চাঁদে যাচ্ছে?

আর্টেমিস এর মাধ্যমে শুধুমাত্র নিজেদের নাম উজ্জ্বল করতে চাঁদে যাচ্ছেনা নাসা। এবার নাসার লক্ষ্য হলো চাঁদকে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করা ও এই দশকের মধ্যভাগে মানুষকে চাঁদে বসতি স্থাপনে সফল হওয়া।

প্রথমত চাঁদের পৃষ্ঠে একজন মহিলা ও অশ্বেতাঙ্গ গমনের মাধ্যমে সমতা প্রতিষ্ঠা হবে। এরপর রকেট থেকে শুরু ক্রু স্পেসস্যুট পর্যন্ত সকল ক্ষেত্রে উন্নতি আসবে যা ভবিষ্যতের স্পেশ মিশনে কাজে লাগবে। এছাড়া আর্টেমিস হলো এমন একটি মিশন যেখানে রাষ্ট্রয়াত্ত প্রতিষ্ঠান নাসা কাজ করবে স্পেসএক্স ও বোয়িং এর মত কমার্শিয়াল কোম্পানিগুলোর সাথে।

১৯৭২সালে পাঠানো এপোলো ১৭ ক্রু লুনার সার্ফেসে তিনদিন অবস্থান করেছিলেন। আর্টেমিস এর মাধ্যমে এবার লক্ষ্য হলো সপ্তাহ বা সম্ভব হলে মাসব্যাপী চাঁদে অবস্থান করা। এছাড়া চাঁদে থেকে অনেক নতুন বিষয়ে জানা যাবে ও চাঁদকে ভালোভাবে গবেষণাও করা যাবে।

চাঁদে যাত্রার সাথে মঙ্গলে যাত্রার কোনো সম্পর্ক আছে কি?

চাঁদে যাত্রা করতে যেখানে মাত্র তিনদিন সময় লাগে, সেখানে মঙ্গল গ্রহে যাত্রা করতে আরো বেশি সময় লাগবে ও বড় বাধা বিপত্তির মুখোমুখি হতে হবে। আর্টেমিস মিশনকে নাসা দেখছে ভবিষ্যতে মানুষচালিত মঙ্গলযাত্রার অংশ হিসেবে। নাসার লক্ষ্য হলো চাঁদভিত্তিক ব্যবস্থাপনায় সেখান থেকে মঙ্গলে মানুষ পাঠানো।

এক নজরে আর্টেমিস ১ প্রোগ্রাম এর গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

  • লঞ্চ সাইটঃ লঞ্চপ্যাড ৩৯বি নাসা কেনেডি স্পেস সেন্টার, ফ্লোরিডা
  • উৎক্ষেপণের সময়ঃ বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টা ৪৭মিনিট, ১৬ নভেম্বর ২০২২
  • মিশনের দৈর্ঘ্যঃ ২৫দিন ১১ঘন্টা ৩৬মিনিট (প্রায়)
  • গন্তব্যঃ চাঁদের ‘ডিস্ট্যাস্ট রিট্রোগেড অরবিট’
  • মোট দূরত্বঃ ২১ লাখ কিলোমিটার (প্রায়)
  • অবতরণঃ স্যান ফ্রান্সিসকো উপকূল, প্রশান্ত মহাসাগর
  • ফেরার তারিখঃ (সম্ভাব্য) ১১ ডিসেম্বর, ২০২২

The post চাঁদে মানুষ পাঠানোর মিশন পুনরায় শুরু হলো আর্টেমিস ১ এর মাধ্যমে appeared first on Trickbd.com.



from Trickbd.com https://ift.tt/MV5aJZ6
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post