দেশে তুমূল আলোচনা চলছে স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা স্টারলিংক নিয়ে। বাংলাদেশেও Starlink এর সেবা পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হচ্ছে আগামী মাসের ৯ এপ্রিল থেকে। ধারণা করা হচ্ছে, এই সেবা চালু হলে ইন্টারনেট গতির ধারণাই বদলে যাবে ব্যবহারকারীদের। তবে এ সম্পর্কে এখনো অনেক কিছুই অজানা। মানুষের মধ্যে মূলত এর খরচ কেমন, কি কি সুবিধা পাওয়া যাবে এসব নিয়ে চর্চা চলছে।
আজকের ব্লগে আমি Starlink সম্পর্কে একটি ধারণা দেওয়ার চেষ্টা করব, এটা কি এবং এটা কিভাবে কাজ করে এবং এর খরচ কেমন হতে পারে ইত্যাদি।
Starlink কি?
Starlink ইন্টারনেট আসলে কি? এটি হচ্ছে যোগাযোগমূলক স্যাটেলাইট তথা জিও স্টেশনারি উপগ্রহের সাহায্যে সংযুক্ত হওয়ার প্রক্রিয়া। এই সংযোগ তারবিহীন এবং দ্রুত গতিতে সার্ভিস দিতে পারে অর্থাৎ, কোনো ধরনের তারের সংযোগ ছাড়াই মহাকাশে থাকা স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সরাসরি বাসায় বা ফোনে ইন্টারনেট সংযোগ পাওয়া যাবে। ফলে বিমানে বসে, কিংবা দুর্গম এলাকায়, অথবা ভয়াবহ দুর্যোগের মধ্যেও ইন্টারনেট সেবা পাওয়া যাবে।
স্টারলিংকের মূল প্রতিষ্ঠান SpaceX এর ওয়েবসাইটে দেয়া তথ্য অনুযায়ী, তাদের ইন্টারনেট সেবা জিও স্টেশনারি থেকে আসে যা ৩৫,৭৮৬ কিমি উপরে থেকে পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে। সবশেষ হিসেবে স্টারলিংকের ৬,৯৯৪টি স্যাটেলাইট স্থাপিত হয়েছে। আর বিশ্বে প্রায় ১০০টির বেশি দেশে তাদের কার্যক্রম রয়েছে।
Satelite ইন্টারনেট সেবায় কি Starlink ই প্রথম?
অবশ্যই না, স্যাটেলাইট ইন্টারনেট যুগের সূচনা হয়েছিল গত শতাব্দীতেই। Geo-Stationary Earth Orbit স্যাটেলাইটের মাধ্যমে উন্নত বিশ্বের অনেক দেশেই নীরবচ্ছিন্ন ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছে ACS, HughesNet আর Viasat এর মত প্রতিষ্ঠান। জিও স্যাটেলাইটগুলো পৃথিবী থেকে ৩৫,৭৮৬ কিমি উচ্চতায় স্থাপিত। এরা পৃথিবীকে ২৪ ঘন্টায় একবার পূর্ণরূপে প্রদক্ষিণ করে। গ্রাউন্ড স্টেশন থেকে পাঠানো সিগন্যাল গ্রহণ করে, তা আবার রিলে করে গ্রাহকের ডিভাইসে পৌঁছে দেয়। সহজ কথায়, আপনি যখন একটি ইমেইল পাঠান, তখন সেটি প্রথমে আপনার ইন্টারনেট প্রোভাইডারের নিকটবর্তী গ্রাউন্ড স্টেশনে পৌঁছায়। তারপর সেটি জিও স্যাটেলাইটে পৌঁছে আবার ভূমির লক্ষ্যবস্তুতে ফিরে আসে।
এই স্যাটেলাইটের মাধ্যমে দীর্ঘকাল ধরে টিভি সম্প্রচার ও টেলিযোগাযোগ সহ বহুবিধ কাজ করা হচ্ছে। জিও স্যাটেলাইটগুলো বিস্তর এলাকা জুড়ে হাই-ব্যান্ডউইথ ইন্টারনেট প্রদানে সক্ষম।
Starlink এ নতুনত্ব কি?
Geo-Stationary Earth Orbit Satelite এর সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধকতা হলো High Latency । বেশি দূরত্বের কারণে সিগন্যাল মহাকাশে যেতে এবং ফিরে আসতে ৬০০ মিলিসেকেন্ডেরও বেশি সময় লেগে যায়। ফলে খরচের তুলনায় প্রত্যাশিত ইন্টারনেট সেবা পান না এর গ্রাহকরা। আর এই সমস্যারই এক যুগান্তকারী সমাধান হলো ইলন মাস্কের স্টারলিংক।
স্টারলিংক কোম্পানি Low Earth Orbit (LEO) বা নিম্নকক্ষে স্থাপিত স্যাটেলাইট ব্যবহার করে। বর্তমানে তাদের স্যাটেলাইটসমূহ পৃথিবীর প্রায় ৫৫০ কিমি উপরে অবস্থান করছে। এই LEO স্যাটেলাইটগুলো ম্যাশ নেটওয়ার্ক পদ্ধতিতে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ করে সরাসরি ডাটা ট্রান্সফার করে। এতে স্থলভাগে গ্রাউন্ড স্টেশনের উপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে ডাটা রাউটিং আরো দ্রুত সম্ভব হয়। প্রতিটি স্টারলিংক স্যাটেলাইটে তিনটি স্পেস লেজার থাকে, যা প্রতি সেকেন্ডে ২০০ জিবি ডেটা অন্য স্যাটেলাইটের সাথে আদান-প্রদান করতে সক্ষম। গ্রাউন্ড স্টেশনের দূরত্ব কম হওয়ায় স্টারলিংকের লেটেন্সি মাত্র ২৫ থেকে ৬০ মিলিসেকেন্ড। কোনো রকম তারের সংযোগ ছাড়াই গ্রাহকরা প্রতি সেকেন্ডে ২৫ থেকে ২২০ মেগাবাইট পর্যন্ত ডাউনলোড স্পিড পান।
গ্রাহকরা Starlink এর সেবা কিভাবে নিবে?
যে কেউ চাইলে ৫০০ বা ১০০০ টাকা দিয়ে স্টারলিংকের সংযোগ চালু করতে পারবে না। সেবা পেতে গ্রাহককে অবশ্যই টেলিভিশনের এন্টেনার মতো একটি ডিভাইস বসাতে হবে, যা পৃথিবীর কক্ষপথে ঘুরতে থাকা স্যাটেলাইটের সঙ্গে সংযোগ রক্ষা করে। স্টারলিংকের ওয়েবসাইটে বলা আছে, বাসাবাড়িতে তাদের সেবা নিতে হলে কিছু সরঞ্জাম কিনতে হবে। সেখানে থাকবে একটি রিসিভার বা এন্টেনা, কিক স্ট্যান্ড, রাউটার, তার ও বিদ্যুৎ সরবরাহের ব্যবস্থা বা পাওয়ার সাপ্লাই। এটাকে স্টারলিংক কিট বলা হয়, যার মূল্য ৩৫০ থেকে ৫৯৯ ডলার পর্যন্ত, যা বাংলাদেশী মুদ্রায় ৪৩ থেকে ৭৪ হাজার টাকা। এছাড়া আবাসিক গ্রাহকদের জন্য স্টারলিংকের মাসিক সর্বনিম্ন ফি ১২০ ডলার, যা প্রায় ১৫,০০০ টাকা।
তথ্য বলছে, স্টারলিংকের ইন্টারনেটে ডাউনলোড গতি ২৫ থেকে ২২০ এমবিপিএস। তবে বেশিরভাগ ব্যবহারকারী ১০০ এমবিপিএস-এর বেশি গতি পান। স্টারলিংকে আপলোড গতি সাধারণত পাঁচ থেকে ২০ এমবিপিএস-এর মধ্যে থাকে।
Starlink সেবাগ্রহীতা দেশ
বর্তমানে প্রায় ১০০টি দেশে Starlink এর সেবা চালু থাকলেও নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে বিভিন্ন দেশে আইনগত ও নীতিগত চ্যালেঞ্জের মুখে স্টারলিংক। দক্ষিণ এশিয়ায় একমাত্র ভুটানে এ সেবা চললেও ১৫০ কোটি জনসংখ্যার দেশ ভারত এখনো স্টারলিংককে লাইসেন্স দেয়নি। ইতালি ও ফ্রান্স পরিবেশগত কারণ দেখিয়ে কিছুদিন স্টারলিংকের কার্যক্রম স্থগিত রেখেছিল। চীন ও রাশিয়া একে নিরাপত্তার জন্য হুমকি মনে করে নিষিদ্ধ করেছে।
বাংলাদেশে Starlink এর যাত্রা
বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো শুরু হতে যাচ্ছে স্টারলিংকের পরীক্ষামূলক ব্যবহার। আগামী ৯ই এপ্রিল বাংলাদেশ বিনিয়োগ সম্মেলনের আসরে প্রধান উপদেষ্টা ডক্টর মোহাম্মদ ইউনুসের হাত ধরে পরীক্ষামূলক যাত্রা শুরু করবে স্টারলিংক ইন্টারনেট। এবারে এর স্পিড কত হবে, সেটি জানা যাবে আগামী ৭ই এপ্রিল থেকে। ঢাকায় শুরু হচ্ছে চার দিনের বিনিয়োগ সম্মেলন। এ সম্মেলনে স্টারলিংক ইন্টারনেটের পরীক্ষামূলক ব্যবহার শুরুর করার কথা রয়েছে।
পরিশেষে এটাই বলতে চাই, Starlink বাংলাদেশে আসার মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রযুক্তির তে নতুন একটি মোড় আসবে যদিও বর্তমানে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ Starlink ব্যবহার করার মত সামর্থ থাকবে না।
তবে আশা করা যায় আগামী কয়েক বছরের মধ্যে এই প্রযুক্তির দাম সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে চলে আসবে।
তথ্যসুত্রঃ বিভিন্ন নিউজ রিপোর্ট ( যমুনা, কালবেলা) এবং ইন্টারনেট।
The post Starlink কি? Starlink কিভাবে কাজ করে? appeared first on Trickbd.com.
from Trickbd.com https://ift.tt/Jc4XN09