নতুন ওয়েবসাইট তৈরির আবশ্যক ২১ টি বিষয় সম্পর্কে জেনে নিন?
নতুন ওয়েবসাইট তৈরির ২১ টি চেকলিস্ট জেনে নিন
প্রতিদিন সারাবিশ্বে হাজার হাজার ওয়েবসাইট তৈরি হচ্ছে। আর প্রতিটা স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের একটা ওয়েবসাইট বা ওয়েবপেইজ থাকবে এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে দেখা যায় কিছু ত্রুটি বিচ্যুতি কারণে এসব ওয়েবসাইটের অনেক সমস্যা দেখা দেয়। যা পরবর্তীতে এসব ওয়েবসাইট ব্যবহারকারীদের সমস্যায় ফেলে দেয়।
একটি ওয়েবসাইট ডিজাইন ও ডেভেলপমেন্ট হয়ে গেলে সেটির ডিজাইন কিংবা কনটেন্টের পরির্বতন করা বেশ ঝামেলার। তাই ওয়েবসাইট তৈরি করার শুরুতেই বেশ কিছু বিষয় ভালোভাবেই যুক্ত করা উচিত। এসব বিষয়গুলো ছাড়া ওয়েবসাইট অসম্পূর্ণ মনে হয়।
তাছাড়া কোনো সদ্য প্রতিষ্ঠিত হওয়া প্রতিষ্ঠানের বা ব্যবসার জন্য তৈরি করা ই-কমার্স সাইট যদি এসব ত্রুটিজনিত কারণে গ্রাহকদের সমস্যায় ফেলে দেয় তবে তা ওই প্রতিষ্ঠানের উপর একটা খারাপ প্রভাব ফেলে। আর ওয়েবসাইটের বিভিন্ন বাগ বা ত্রুটি দূর করার দায়িত্ব পরবর্তীতে এসব ওয়েব ডেভেলপারদের ঘাড়েই পড়ে! তাই কোনো ওয়েবসাইট লঞ্চ করার পূর্বে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের দিকে নজর রাখা উচিত। আপনি যদি একজন ওয়েব ডেভেলপার হন তবে এসব বিষয় মেনে চলার মাধ্যমে ওয়েবসাইটের বিভিন্ন অনাকাঙ্ক্ষিত বিষয়গুলো থেকে রক্ষা পাবেন।
চলুন নতুন ওয়েবসাইট তৈরির ক্ষেত্রে আবশ্যক ১০টি বিষয় সম্পর্কে জেনে নেই।
লোগো
একটি লোগো সংশ্লিষ্ঠ প্রতিষ্ঠান কিংবা ব্লগের বা ওয়েব সাইটের পরিচয় বহন করে। প্রতিনিয়তই লোগো পাল্টানো সম্ভব না। তাই দায়সারাভাবে টেক্সট, লোগো মেকার অথবা ক্লিপআর্টের মাধ্যমে লোগো না তৈরি করে, ভালোমানের ডিজাইনার দিয়ে একটি সুন্দর ও প্রফেশনাল লোগো তৈরি করতে হবে। সেটি সাইটের হেডারে যথাযথ স্থানে বসাতে হবে, যাতে ভিজিটররা সহজেই লোগোটি দেখতে পারে।
ট্যাগলাইন
সংক্ষিপ্ত কথার মাধ্যমে ঐ ওয়েবসাইটটির সেবা বা কি ধরণের ওয়েবসাইট তা বোঝানোর জন্য ট্যাগলাইন ব্যবহার করা হয়। তাই একটি ছোট, সহজেই আকর্ষন করে এবং যাতে একজন ভিজিটার ট্যাগলাইন দেখেই সাইটি সম্পর্কে ধারণা করতে পারে এমন ট্যাগলাইন ব্যবহার করতে হবে।
পোর্টফোলিও
এটি মূলত ব্যক্তিগত কিংবা সেবাভিত্তিক প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে যুক্ত করতে হয়। তাই আপনার কিংবা আপনার প্রতিষ্ঠানের আগের কিছু কাজ বা সেবা পোর্টফোলিও হিসেবে যুক্ত করতে হবে। আপনি একজন প্রফেশনাল ওয়েব ডিজাইনার হলে আপনার ওয়েবসাইটে আগের করা কিছু কাজের নমুনা পোর্টফোলিও হিসেবে যুক্ত করতে পারেন। এছাড়া কোম্পানির ওয়েবসাইট হলে ঐ কোম্পানির ভালো কিছু ক্লায়েন্টের জন্য করা কাজ বা সেবা যুক্ত করা যেতে পারে।
হাই কোয়ালিটি কন্টেন্ট
আপনার ওয়েব সাইটটি যদি এ্যাফিলিয়েট করার জন্য হয় তবে অন্ততপক্ষে তিনটি হাই কোয়ালিটির কন্টেন্ট লিখুন। তাহলে সার্চ ইন্জিনে ভালো রেজাল্ট পাওয়া যায়।
সার্ভিস পেইজ
আপনি কিংবা আপনার প্রতিষ্ঠান কি ধরণের সেবা দিচ্ছে তা সার্ভিস পেইজে যুক্ত করতে হবে। কাঙ্খিত ক্রেতা যাতে ওয়েবসাইট দেখেই আপনার সেবা সম্পর্কে ধারনা পায় ও নিতে আগ্রহী হয় সেভাবে সেবাগুলোর বিবরণ দিতে হবে। আপনার সেবা বা পণ্য নিলে ক্রেতারা কেনো লাভবান হবেন সেটি বর্ণনা দিতে হবে।
অ্যাবাউট আস পেইজ
আপনি কিংবা আপনার কোম্পানি কি, আপনার কোম্পানির মিশন, ভিশন, অতীত, আপনার কোম্পানির সদস্যদের সম্পর্কে এখানে তুলে ধরতে হবে। এককথায় আপনার কিংবা কোম্পানির সম্পর্কে যাতে এই পেইজ থেকে পুরো ধারণা দেওয়া যায় সেভাবে উপস্থাপন করতে হবে অ্যাবাউট/অ্যাবাউট আস পেইজ।
কনট্যাক্ট পেইজ বা ফর্ম
ভিজিটর আপনার কিংবা কোম্পানির ওয়েবসাইট দেখে যোগাযোগ করার ইচ্ছা পোষন করতে পারে। তাই কনট্যাক্ট পেইজে আপনার কিংবা আপনার প্রতিষ্ঠানের নাম, ঠিকানা, ইমেইল, ফোন নাম্বারসহ যোগাযোগের অন্যান্য মাধ্যমে যেমন ফেইসবুক পেইজ/আইডি, টুইটার অ্যাকাউন্ট, স্কাইপ অ্যাকাউন্ট ইত্যাদি যুক্ত করতে হবে। সম্ভব হলে গুগল ম্যাপের মাধ্যমে ঠিকানা দেখিয়ে দেওয়া যেতে পারে। এছাড়া ভিজিটর যাতে সহজেই মেইল অথবা মেসেজ পাঠাতে পারে তার জন্য একটি কনট্যাক্ট ফরমও বসানো যেতে পারে। আপনার তৈরি করা ওয়েবসাইটের প্রতিষ্ঠানটি যদি কোনো পণ্য বা সার্ভিস সরবরাহ করে থাকে তবে সেক্ষেত্রে সাইটে ফোন নাম্বার, ইমেইল অ্যাড্রেস, মেইলিং অ্যাড্রেসের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো ভালোভাবে হাইলাইট করা উচিত।
কল টু এ্যাকশন ও লিঙ্ক
নতুন ওয়েব সাইট অনলাইনে এনে প্রথমেই দেখা উচিৎ বাটন ও লিঙ্কগুলো ঠিক ভাবে কাজ করছে কিনা। ডেড লিঙ্ক ভিজিটর ও সার্চ ইন্জিন উভয়েই অপছন্দ করে।
টেস্টিমোনিয়াল
ব্যবসায় কিংবা সেবার ক্ষেত্রে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনার পুরাতন ক্লায়েন্ট আপনার কাজ, পণ্য বা সেবা নিয়ে কিভাবে উপকৃত হয়েছে,েআপনার সেবা সম্পর্কে তাদের মন্তব্য কি এটা টেস্টিমোনিয়াল পেইজে যুক্ত করতে হবে। আপনার সন্তুষ্ঠ ক্লায়েন্টের এমন মন্তব্যের মাধ্যমে আরও নতুন ক্লায়েন্ট পাওয়ার সুযোগ তৈরি হবে।
এসইও ফ্রেন্ডলিনেস চেকিং
একটি ওয়েব সাইটের ছোট ছোট অনেক বিষয় থাকে যার উপর এসইও তে সফলতা নির্ভর করে। বিষয়গুলো ওয়েব সাইট ডেভেলপ করার সময়েই লক্ষ রাখা দরকার।
এক্সএমএল সাইটম্যাপ
একটি ওয়েবসাইটের সকল পেজ ও পোস্ট এর লিঙ্ক সার্চ ইঞ্জিনের কাছে সম্পূর্ণরুপে তুলে ধরার জন্য সাইটম্যাপ জরুরী। এর ফলে সার্চ ইঞ্জিন সহজেই আপনার ওয়েবসাইটের সকল পেইজ, পোস্ট দ্রুত ইনডেস্ক করতে পারবে ও সার্চ ইঞ্জিন ব্যবহারকারীদের কাছে তুলে ধরতে পারবে। ওয়েবসাইটের ফুটার কিংবা উপরের মেনুতে একটি পেইজের মাধ্যমে সাইটম্যাপ যুক্ত করা যেতে পারে।
লোডিং স্পিড টেস্ট
আপনার ওয়েব সাইটের লোডিং স্পিড টেস্ট করা খুবই জরুরি। আপনার সাইট স্লো হলে ভিজিটর যেমন বিরক্ত হয়, তেমনি সার্চ ইন্জিনও র্যাঙ্কিং দেয়না।
ভেলিডেট এইচটিএমএ ও সিএসএস
যদিও সামান্য পরিমান এইচটিএমএ ও সিএসএস কোডের ইরোরের কারনে ওয়েবের তেমন কোন ক্ষতি হয়না। তবুও একটি নতুন সাইটের ক্ষেত্রে এটি চেক করে কোড ক্লিন করা উচিৎ।
সোশ্যাল মিডিয়া লিংক
বর্তমানে যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে ফেইসবুক, টুইটার, লিংকডইন, ইউটিউবের কোনও বিকল্প নেই। আপনার কিংবা আপনার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে অনেকেই আপডেটের থাকতে চাইবেন। আপনিও চাইবেন যাতে আপনার এসব সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমে ভিজিটররা সযুক্ত থাকতে পারে, তাদের কাছে আপনার সেবা পৌছে যাক। এজন্য সাইটের হেডার, ফুটার অথবা সাইডবারে সোশ্যাল মিডিয়া লিংকগুলো যুক্ত করতে হবে। মনে রাখতে হবে এগুলোতে যাতে সহজেই ভিজিটর দেখতে ও ক্লিক করতে পারেন।
সার্চ সুবিধা
আপনার সাইটটি যদি একটি ব্লগ, নিউজপেপার কিংবা কনটেন্ট ভিত্তিক ওয়েবসাইট হয় সেক্ষেত্রে সার্চ সুবিধা যুক্ত করতে হবে। ভিজিটর হয়তোবা পুরাতন কোনও পোস্ট দেখতে চাইবেন। সেক্ষেত্রে একটার পর একটা পেইজ কিংবা পোস্ট ক্লিক করে খুঁজে পাওয়া কষ্টকর। তাই ভিজিটররা যাতে সহজেই একটি লেখা বা কনটেন্ট খুঁজে পেতে পারে তার জন্য হেডারে কিংবা সহজেই দেখা যায় এমন স্থানে সার্চ অপশন যুক্ত করতে হবে।
ইমেইল সাবস্ক্রিপশন
ভিজিটরদের সাথে যোগাযোগ রাখতে গেলে ইমেইল লিস্ট বানানো দরকার। আর তাই ইমেইল সংগ্রহ করার জন্য ওয়েব সাইটে ইমেইল সাবস্ক্রিপশন ফর্ম রাখাটা খুবই দরকার। এর মাধেমে আপনার ওয়েব সাইটের নতুন কন্টেন্ট আপডেটের বার্তা সহজেই ভিজিটরদের ইমেইলে পাঠানো যায়।
মেটা ডেসক্রিপশন:
মেটা ডেসক্রিপশন হচ্ছে সেসব কিওয়ার্ড যা মানুষ ইন্টারনেটে সার্চ দিয়ে তাদের প্রয়োজনীয় জিনিস খুঁজে। কিন্তু সার্চ রেজাল্টে তারা যদি তাদের পছন্দসই জিনিস খুঁজে না পায় তাহলে সে আর সেই লিঙ্কে ক্লিক করবে না। তাই মেটা ডেসক্রিপশনে আকর্ষণীয় টাইটেল ও বিস্তারিতভাবে সব কিছু বর্ণনা করে দিলে সেটা খুব সহজেই গ্রাহকদের আকৃষ্ট করবে।
রেসপন্সিভ / ক্রস প্ল্যাটফর্ম / ব্রাউজার টেস্টিং:
আপনার ওয়েব সাইটের ভিজিটর বিভিন্ন ডিভাইস এর মাধ্যমে ব্রাউস করে। তাই অন্যান্য ডিভাইস যেমন মোবইল, ট্যাবলেট ও বিভিন্ন সাইজের মনিটরের স্ক্রিনে ও ব্রাউজারে ওয়েবসাইটটি ব্রাউজ করে দেখা উচিত। অন্যান্য ডিভাইসে ওয়েব সাইটি কেমন দেখাচ্ছে তার উপর ব্যবহারকারীদের প্রতিক্রিয়া নির্ভর করে।
অ্যানালাইটিক্স:
অ্যানালাইটিক্স অ্যাড করার মাধ্যমে আপনার সাইটে দর্শকের পরিমাণ, গতিবিধি বা আচরণ কেমন সেই ব্যাপারটি জানতে পারবেন। দিনেদিনে আপনার ওয়েবসাইট কতটা জনপ্রিয় হচ্ছে সে ব্যাপারটি জানিয়ে দিবে অ্যানালাইটিক্স। তাই ওয়েবসাইট লঞ্চ করার আগে এই বিষয়টি অবশ্যই মাথায় রাখতে হবে।
লিগ্যাল পেইজ:
টার্মস অ্যান্ড কন্ডিশনস, টার্মস অফ ইউজ, রিফান্ড পলিসি, প্রাইভেসি পলিসি প্রভৃতির মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো সাইটে ভালোভাবে উল্লেখ করা উচিত। কারণ এগুলো আপনার তৈরি করা ওয়েবসাইটের প্রতিষ্ঠানের লিগ্যালিটিস সংক্রান্ত তথ্য নির্দেশ করে। এছাড়া ওয়েবসাইট ব্যবহারকারীদের সুবিধার্তে কপিরাইট, কুকিজ ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো হাইলাইট করা উচিত।
নিরাপত্তা:
সারাবিশ্বে প্রতিদিন হাজার হাজার ওয়েবসাইট হ্যাক হচ্ছে। হ্যাকাররা ওয়েবসাইটের সাথে সম্পৃক্ত প্রতিষ্ঠানের গুরুত্বপূর্ণ তথ্য নষ্ট করে দেয় কিংবা নিজেদের কাছে রেখে অর্থ দাবি করে। আর একারণে ব্যক্তিগত কিংবা অর্থ সংক্রান্ত তথ্য হুমকির মধ্যে পড়তে পারে। তাই ওয়েবসাইটের নিরাপত্তা রক্ষার্থে একজন সিকিউরিটি এক্সপার্টকে দিয়ে ওয়েবসাইটের পটেনশিয়াল সিকিউরিটি ফ্ল, সোর্স কোডের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিরীক্ষা করিয়ে নেয়া উচিত। ক্র্যাক, SQL ইনজেকশন, XSS ভালনারেবল নিরীক্ষা করে দেখা উচিত।
এছাড়াও ওয়েব সাইটের প্রতিটি ফিচার যেমন কন্টাকট ফরম, ইমেজ আপলোডিং অপশন প্রভৃতি ঠিক ভাবে কাজ করছে কিনা টেস্ট করা উচিত।
❂✪লেখক✪❂
Saimum Raihan
ওয়েব ডিজাইনার, গ্রাফিক্স ডিজাইনার, ইউটিউবার, CPA ও অ্যাফিলিয়েট মার্কেটার এবং কন্টেন্ট রাইটার।
The post নতুন ওয়েবসাইট তৈরির আবশ্যক ২১ টি বিষয় সম্পর্কে জেনে নিন? appeared first on Trickbd.com.
from Trickbd.com http://bit.ly/2TKXwWQ